মোস্তফা কামাল, ডুলাহাজারা :

লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ৫টি ইট ভাটায় প্রকাশ্যে নির্বিচারে পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের গাছ, অন্যদিকে স্কেভেটার দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি লুটের মাধ্যমে চালাচ্ছে ইট তৈরির কার্যক্রম।

এতে করে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল অন্যদিকে লোকালয়ে স্কেভেটার দিয়ে পাহাড় কাটার ফলে চারপাশের পরিবেশ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। অপরদিকে ইটভাটার ড্রাম চিমনির মাটি পোড়া কালো ধোঁয়ার প্রভাবে জীবন ঝুকিতে রয়েছে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারীপার্কের সুন্দর পশু-পাখিগুলো।

সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের এসব অবৈধ ইটভাটায় স্কেভেটার দিয়ে রাত-দিন পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপন্ন করে চলছে। জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনের গাছ। প্রশাসনের কোন ধরণের বৈধতা না নিয়ে ইট ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে পরিবেশ বিপন্নকারী এসব ইটভাটার মালিকরা। সনাতন পদ্ধতির ইটভাটার মাধ্যমে অতি মাত্রায় পরিবেশ দুষণ করা হলেও রহস্য জনকভাবে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, ইটভাটাগুলো এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে ওই এলাকা পুরোপুরি মরুভূমতে পরিণত হবে। এ ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে বড়-বড় ট্রাকে করে ইট পরিবহণের ফলে সরকারী অর্থে নির্মিত রাস্তা-ঘাট ও কালভার্ট ভেঙ্গে যাতায়তে জন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব ইট ভাটাগুলোর অবস্থান হচ্ছে, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের অদূরে লামা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি- মালুম্মা এলাকায় এম.এস.বি ব্রিকস, হারহাজা এলাকায় এইচ.বি. ব্রিকস, রইঙ্গা এলাকায় কে.বি.সি ব্রিকস, ইয়াংছা কাঠাল ছড়া এলাকায় কে.সি.বি ব্রিকস ও সাপের গাড়া এলাকায় ১টি সহ মোট ৫টি অবৈধ ইট ভাটা রয়েছে। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ফাঁসিয়াখালীর এসব অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অপর দিকে পরিবেশ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ (সংষোধনী ২০১৩) এ উল্লেখ করা হয়, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা উপজেলা সদর সরকারী বা জলাভূমি কৃষি প্রধান এলাকা এবং পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপনকরা যাবে না। উল্লেখিত এলাকা সমূহে ইটভাটা স্থাপন করলে ৫ বছরের কারাদন্ড এবং ৫ লাক টাকা জরিমানা আদায়ের বিধান করেছে। ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ এর ৪নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে স্কুল বা যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক মাইলের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ৫নং ধারাতে উল্লেখ আছে, কৃষি জমি বা পাহাড় বা টিলা হইতে মাটি কাটা বা সংগ্রহ করে ইট তৈরি করা যাবে না। যদি করা হয়, ৬নং ধারা মতে ৩ বছর কারাদন্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। ১৬নং ধারাতে বলা আছে ধারা ৬ এর মতে ৩ লাখ টাকা জরিমানা ৩ বছর কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আইনের এসব বিধান থাকলেও এই আইন মানছেন না উক্ত ইটভাটার মালিকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক, মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, লামা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইট ভাটা পরিবেশের জন্য হুমকির রূপ হয়ে উঠেছে। তবে বান্দরবান জেলার পরিবেশ দেখাশোনা করেন, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার অঞ্চলের পরিচালক- সাইফুল আশরাবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে বনের কাঠ ব্যবহারের বিষয়টি বন বিভাগকে জানান। পরিবেশ রক্ষায় আমরা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের এসব ইটভাড়াগুলোর বিরুদ্ধে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে আইনী ব্যবস্থা নেব ইনশাহ্আল্লাহ। লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ও.সি) আনোয়ার হেসেন বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কোন বিভাগ পুলিশের সহযোগিতা চাইলে তা দেওয়া হবে।